নানা কারনেই তিনি আলোচিত। আলোচনার চেয়ে সমালোচনায় তাকে নিয়ে বেশি। অঘাত পান্ডিত্যের ভাব আর কুচ চাকরি হারাতে বসেছেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচিত এই নারী সাংবাদিক। কর্মক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত কর্তৃত্ব জাহির এবং সহকর্মীদের সঙ্গে অশোভন আচরণের কারণে সম্প্রতি তাঁর চাকরি নড়বড়ে হয়ে গেছে। তাঁর কারণে টিভি চ্যানেলটির মালিক অনেকের বিরাগভাজন হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে টক শো’তে আমন্ত্রিত অতিথিদের অসঙ্গতিপূর্ণ উল্টা-পাল্টা প্রশ্ন করে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলারও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তিনি আর কেউ নন, সংবাদ ভিত্তিক চ্যানেল এনটিএন নিউজ এর সিইও মুন্নী সাহা।
নেহি মনোভবের কারণে সবার চক্ষুশুল এখন তিনি। দেশে নারী সাংবাদিক বলতেই নাম আসে তার। অনেক প্রভাবশালী হিসেবে এতোদিন নিজেকে জাহির করলে এখন আর হারে পানি পাচ্ছেন না তিনি।

এক সময়ের সর্বাধিক প্রচারিত একটি বাংলা দৈনিকের নিজস্ব প্রতিবেদক এই নারী সাংবাদিক একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে দেশের প্রথম টেরিস্টরিয়াল বেসরকারি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় পা রাখেন। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক- উভয় গণমাধ্যমেই একাধিক অনুসন্ধানী ও সাহসী প্রতিবেদন করে যথেষ্ট সুনামের পাশাপাশি বারবার পুরস্কৃতও হয়েছেন তিনি।
আলোচিত এই নারীর এক সময়ের সহকর্মী ঢাকার একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকতায় দ্বিতীয় কর্মস্থলে পা রেখেই তিনি (নারী) দ্রুত বদলে যেতে থাকেন। দৈনন্দিন জীবনযাপনও হয়ে ওঠে অনেকটা বেপরোয়া। সেই সঙ্গে অর্থবিত্তের প্রভাব-প্রতিপত্তিও বাড়তে থাকে। সার্বক্ষণিক পেশাদারীত্বের পাশাপাশি শুরু হয় বিলাসবহুল জীবন-যাপন, চলাফেরা ও দাম্ভিকতা। একজন শিক্ষিত বাঙালি নারী হয়েও পোশাক-আশাকেও তিনি শালীনতাবিবর্জিত বলে ওই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মন্তব্য করেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান টিভি চ্যানেলটি ওই নারীর ইলেক্ট্রানিক গণমাধ্যমের তৃতীয় কর্মস্থল। বেশ বড় পদবী নিয়েই ২৪ ঘন্টার সংবাদভিত্তিক চ্যানেলটিতে আসেন তিনি। তবে উচ্চপদে আসীন হলেও এখনো মাঠে ময়দানে গিয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন করেন। রাতে টক শো’ সঞ্চালন করেন। মালিকপক্ষের অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে কর্মস্থলে অধস্তন সহকর্মীদের সঙ্গে প্রচণ্ড অশোভন আচরণ করেন তিনি। এমনকি সমপদমর্যাদা কিংবা অপেক্ষাকৃত উচ্চপদের সহকর্মীদের ওপর অযাচিত খবরদারির অভিযোগও রয়েছে বহুল আলোচিত এই নারীর বিরুদ্ধে।

তাঁর বর্তমান ও পূর্ববর্তী কর্মস্থল অর্থাৎ দুটি টিভি চ্যানেল ছেড়ে অন্যত্র চাকরি নেওয়া বেশ কয়েকজন সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, ওই নারীর জন্য তাঁরা সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন তো দূরের কথা, কর্মস্থলে শান্তিতে থাকতে পারেননি। সাপ্তাহিক ছুটির (ডে অফ) দিনেও অনেককে বিনাকাজে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে বাধ্য করতেন তিনি। এই প্রভাবশালী নারীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও অশোভন আচরণের কারণে অনেকেই বাধ্য হয়ে কর্মস্থল পরিবর্তন করেছেন।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেই দাম্ভিকতা এখন আর তেমন নেই। যে নারীর কারণে টিভি চ্যানেলটির মালিক অনেক নামিদামি মানুষের বিরাগভাজন হয়েছেন ও হচ্ছেন, অনেক প্রবীণ ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছেন এবং সর্বোপরী দক্ষ ও প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকরা কর্মস্থল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, সেই নারী সাংবাদিককে আর বড় পদে বসিয়ে মোটা অংকের অর্থ দিতে চাচ্ছেন না প্রতিষ্ঠানটির মালিক। তাঁকে চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তাঁকে ইতিমধ্যে একটি কারণ দর্শাও নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রতিষ্ঠানের একজন সহসম্পাদক বলেন, বিতর্কিত এই মহিলা সাংবাদিককে চাকরি থেকে ছাঁটাই করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে গিয়ে অন্য একটি টিভি চ্যানেলের বার্তা বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন এক সাংবাদিক বলেন, একজন আওয়ামী ঘরানার বলে পরিচিত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ওই চ্যানেলটি পরিচালনার মূল দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। মালিকই তাঁকে এ প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে ওই সাংবাদিক শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, তিনি আসার আগেই ‘বিতর্কিত নারী সাংবাদিককে অপসারণ করতে হবে’।
সাম্প্রতিক সংবাদ সমূহ