দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-১ (শার্শা) আসনে ১০ প্রার্থীর নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ থেকে তিনজন, আর প্রধান বিরোধী দল বিএনপির তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। এর বাইরে জামায়াত ইসলামি ও জাতীয় পার্টির একজন করে আর ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের দুইজন প্রার্থী রয়েছেন।
সূত্র জানায়, নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততোই সম্ভব্য প্রার্থীরা এলাকায় ভিড় করছেন। সেই সঙ্গে তারা কেন্দ্রে তদ্বিরও চালাচ্ছেন। তবে, কার ভাগ্যে দলীয় মনোনয়ন জুটবে তা কেউ বলতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন। তবে মনোনয়ন লাভের প্রত্যাশায় কম এগিয়ে নেই জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মুজিবুদ্দৌলা সরদার কনক। তিনি এই আসন (শার্শা) থেকে চার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য তবিবর রহমান সরদারের নাতি। সেই হিসেবে তার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। এছাড়া আরও রয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান মিন্নু। দলে তারও শক্ত অবস্থান রয়েছে। অন্যদিকে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট থেকে এই আসনে প্রার্থী ছিলেন জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা আজিজুর রহমান। জোটগতভাবে নির্বাচন হলেও এই আসনটি জামায়াত ইসলাম দাবি করতে পারে। এছাড়া এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক বহিস্কৃত নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তি। তারপরে আছেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি শামছুর রহমান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহসীন কবির। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হবেন মফিজুল ইসলাম লিটন। আর ইসলামি আন্দোলন থেকে দু’জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন-সাজিদুর রহমান ও মাওলানা আব্দুস সামাদ।
জানা গেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতা আলহাজ আলী কদর ৮৬ হাজার ৫৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন পেয়েছিলেন ৭৪ হাজার ২৫৪ ভোট। আলী কদর সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি এলডিপিতে যোগ দেন। ২০০৭ সালের বাতিল নির্বাচনে মফিকুল হাসান তৃপ্তি বিএনপির মনোনয়ন লাভ করেন। কিন্তু পরে তিনি সংস্কারপন্থী গ্রুপে ঝুঁকে পড়ায় দল থেকে বহিস্কার হন। এখন বিএনপি এই দু’নেতাকে পুনরায় দলে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। আর ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন ৯৪ হাজার ৫৫৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটম প্রতিদ্বন্দ্বী চারদলীয় জোটের জামায়াত নেতা আজিজুর রহমান পেয়েছিলেন ৮৮ হাজার ৭০০ ভোট। আফিলউদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পুলিশ পিটিয়ে বিতর্কের ঝড় তোলেন। এছাড়া শার্শায় সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি উপজেলা আওয়ামী লীগে কোন্দল চরম পর্যায়ে গড়ে নিয়ে গেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় শেষ পর্যন্ত তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে আফিলউদ্দিনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মাওলানা আজিজুর রহমান মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামি হন।
এদিকে, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছেন। এমনকি তাদের ভোটার হওয়ার যোগ্যতাও নেই। ফলে কে হবে ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থী এ নিয়ে এখন উপজেলার সর্বত্র চলছে আলাপ-আলোচনা। এ ক্ষেত্রে ১৮ দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বেনাপোলের ব্যবসায়ী শামছুর রহমান চেষ্টা চালাচ্ছেন। এছাড়া তিনি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। এই নেতার সঙ্গে বিএনপির নীতি নির্ধারণী স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের খুবই দহরম-মহরম রয়েছে। যে কারণে তিনিও দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন।
অন্যদিকে, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহসিন কবিরও নির্বাচন মনোনয়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন। সূত্র জানায়, বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক বহিস্কৃত মফিকুল হাসান তৃপ্তির সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশ সখ্যতা রয়েছে। এ কারণে তিনিও বসে নেই। তিনি দলের মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাবেন এমনটাই আশা করছেন তার অনুসারীরা। বর্তমানে তিনি দলের গ্রিন সিগনালের অপেক্ষায় আছেন। এছাড়া ইসলামি আন্দোলনের দুই নেতার মধ্যে যে কোনো একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে দলের জেলা আমির জানিয়েছেন।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
আরো সংবাদ পড়ুন