চলতি সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর এ কারণে আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইমেজ দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। ফলে কর্মী মূল্যায়নসহ দু’জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা সাধারণ জনগণের খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেছেন। দলীয় প্রার্থী হওয়ার জন্য যেমন প্রত্যেক নেতা তাদের দলের হাইকমান্ডে যোগাযোগ শুরু করেছেন। তেমনিভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন গণসংযোগ এবং প্রচার-প্রচারণা। মণিরামপুরে দু’জোটের প্রার্থীতা নিয়ে বর্তমান মতাসীন দলের এমপি এ্যাডভোকেট খাঁন টিপু সুলতান ও বিএনপি’র এ্যাডভোকেট আলহাজ্ব শহীদ ইকবাল হোসেন রয়েছেন সকল মহলে আলোচনার শীর্ষে।

যশোর-৫ (মণিরামপুর) এ আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে দু’জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী প্রায় এক ডর্জন। এদের মধ্যে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী এ্যাডভোকেট খাঁন টিপু সুলতান ও বিএনপি’র এ্যাডভোকেট আলহাজ্ব শহীদ ইকবাল হোসেন গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন সকলের উর্ধ্বে। এ দুই নেতা প্রতিনিয়ত নিজ দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ১টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়নে পর্যায়ক্রমে আলোচনা সভা, কর্মী সভা, বর্ধিত সভা, হাট সভা, মিছিল, মিটিং ও গণসংযোগে করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ঢেকে ফেলেছেন। অধিকাংশ হাট-বাজারের চায়ের দোকানেও চলছে এ দু’নেতার মানদন্ডের আলোচনা-সমালোচনা।

আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট খাঁন টিপু সুলতান আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে পা রাখেন ছাত্র জীবন থেকেই। আর এ ছাত্র রাজনীতি থেকে তাঁর বর্তমান সময় পর্যন্ত পথচলা  নৌকা প্রতীক নিয়েই। মণিরামপুরের এ আসন থেকে তিনি ১৯৯১, ৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। চৌকস এ নেতা ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর অতীতের রাজনীতি থেকে নিজেকে অনেকটাই বদলে নিয়েছেন। যা আগামী নির্বাচনেও মাঠে থাকবেন এমনটা বলে দিচ্ছেন তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ড। তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর মণিরামপুরে রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালবার্ট নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও তিনি মণিরামপুর ডিগ্রী কলেজ আধুনিকায়ন করাসহ শহীদ মশিউর রহমান নামে ৫শ’ আসন বিশিষ্ট একটি অডিটোরিয়াম ভিত্তি প্রস্তর করেছেন। যার নির্মাণ কাজ চলছে। তিনি ইতোমধ্যে মণিরামপুর উপজেলার প্রায় সকল অঞ্চলে পর্যাক্রমে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ভোটারদের কাছে নৌকা প্রতীকের ভোট চাওয়া শুরু করেছেন। মণিরামপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর ব্যাপক অবদান রয়েছে। দলের মধ্যে লবিং-গ্র“পিং থাকলেও তিনি রয়েছেন সকলের কাছে প্রিয়।

বিএনপি জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও পৌর মেয়র আলহাজ্ব এ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন। তিনি বিএনপি দলীয় আঞ্চলিক একজন জনপ্রিয় নেতা। এ নেতা ধানের শীর্ষ প্রতীক নিয়ে ১৯৯১ও ৯৬ এর নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে অল্প কিছু ভোট ব্যবধানে পরাজিত হন। তবে এ সময়ের মধ্যে একাধিকবার নিজ মণিরামপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি একবার মণিরামপুর উপজেলার চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি মণিরামপুর পৌরসভায় দ্বিতীয় বারের মতো পৌর মেয়রও নির্বাচিত হয়েছেন। দলীয় কর্মকান্ডে তাঁর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা থাকার কারণে প্রথম পর্যায়ে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় মণিরামপুর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হন। এক পর্যায় ২০০১ সালে উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র কাউন্সিলরদের ব্যালট ভোটে সভাপতি নির্বাচনে শহীদ ইকবাল হোসেন সভাপতি নির্বাচিত হন। বর্তমানে মণিরামপুর বিএনপি চলে শহীদ ইকবালের একক নিয়ন্ত্রনে। ইতোমধ্যে তিনিও আগামী নির্বাচনের প্রস্তুত স্বরুপ দলীয় নেতা কর্মীদের চাঙ্গা করে তুলেছেন এবং ব্যাপক গণসংযোগসহ কর্মী সমাবেশ শুরু করছেন। তবে দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলা এবং পৌর বিএনপি’র সকল নেতা-কর্মীদের একটাই দাবী  ১৮দলীয় জোটের প্রার্থী এ্যাডভোকেট শহীদ ইকবালকে দেয়া হোক। নইলে স্থানীয় বিএনপি’র সকল নেতাকর্মীরা অন্য প্রার্থী দিলে নির্বাচন বয়কট করবে।

বিগত দিনগুলোতে এ আসনে মনোনয় পেয়েছে বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা ও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস। তিনি এ আসন থেকে বিভিন্ন দলীয় প্রার্থী হয়ে তিনবার এমপি নির্বাচিত হন। তবে গত ২ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে ঢাকার মালিবাগ এলাকার চৌধুরীপাড়া থেকে আটকের পর তাঁর নির্বাচনী এলাকায় কিছুটা ইমেজ সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সম্ভব্য প্রার্থী জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য এড. গাজী এনামুল হক, জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মদ মুছা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব কাজী মাহমুদুল হাসান, জেলা বিএনপি’র আইন বিষয়ক সহ-সম্পাদক এ্যাডভোকেট এম.এ গফুর, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রধান প্রতিবেদক মধুসূদন মন্ডল, আওয়ামীলীগ নেতা স্বপন ভট্টাচার্য্য চাঁদ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মণিরামপুর উপজেলা সাধারন সম্পাদক ইবাদুল ইসলাম মনু, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এম.এ হালিম, আওয়ামীলীগের প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোস্তফা কামাল বনি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকী মাঝে মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
আরো সংবাদ পড়ুন