লোহাগাড়ায় আরেক পরিমলের আবির্ভাব। কোচিংয়ের নামে বাবলু স্যারের যৌন লালসার শিকার একডজন ছাত্রী। মিনা ও সীমা (ছদ্ম নাম) দুই বোন। দুজনই অনেকের সঙ্গে প্রাইভেট পড়ত স্যারের কাছে। স্কুলের কাছে দরবেশহাট এলাকায় একটি রুম ভাড়া নিয়ে পড়াতেন তিনি। একদিন অন্য সহপাঠীরা না এলে শুধু দু’বোনই পড়তে বসে। হঠাৎ মিনাকে পান আনতে দোকানে পাঠান লোহাগাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাবুল স্যার। পান নিয়ে এসে দেখে ছোট বোনের পরনের কাপড় ছেঁড়া। সে কাঁদছে। সেই থেকে আর প্রাইভেট পড়তে যায়নি দু’বোন। স্যারের কঠোর নিষেধের কারণে ভয়ে এ ঘটনা কাউকে সঙ্গে সঙ্গে জানায়নি তারা।

পরে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে আরও কয়েকজনের সঙ্গে ক্লাস রুমেই এমন আপত্তিকর আচরণ করলে একদিন জনৈক ছাত্রী মাকে জানায়। ঘটনা শুনে হতভম্ব মা প্রধান শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন বাবুল কান্তির বিরুদ্ধে। অভিযোগের কপি পাঠানো হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছেও। অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার এবিএম নুরুজ্জমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্তে উঠে আসে শিক্ষক নামের লম্পট বাবুল কান্তির বহু অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অজানা কাহিনী। বর্তমানে বাবুল কান্তিকে দেখলেই বাবুইল্যা বাবুইল্যা বলে ধিক্কার দেয় ছাত্র-ছাত্রীরা।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিগত সাত বছর ধরে তার যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে অন্তত একডজন ছাত্রী। তাদের কারও কারও বিয়ে হয়ে গেছে বলে এখন আর মুখ খুলতে চায় না। এদের অনেকেই এখন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চার বছর আগে এক তরুণী বাবুল কান্তির লালসার শিকার হয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে গোপনে গর্ভপাত করিয়ে আনা হয়। লোকলজ্জার ভয়ে পরিবারও ঘটনাটি আর প্রকাশ করতে চায়নি। একই উপজেলার অন্য ইউনিয়নে তাকে বিয়ে দেয়া হয়।

পাশের উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালে বাবুল তাদের প্রায়ই ফুঁসলিয়ে যৌন নিপীড়ন করত। কথায় কথায় দেহের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে ও লজ্জাস্থানে হাত দিত। ক্লাসের প্রায় সবছাত্রী এমন নিপীড়নের শিকার হলেও ভয়ে কাউকে বলত না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, অনেক ছাত্রীই এসব ব্যাপারে আমাদের জানিয়েছে। তাছাড়া বাবুল কান্তির কেলেঙ্কারির বিষয়টি এলাকার সবার জানা।
স্থানীয় পঞ্চাশোর্ধ্ব এক লোক জানিয়েছেন, স্কুলের পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীদের বাবুল নিজ বাড়িতে নিয়ে পড়াত। এ সময় ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে অনেক ছাত্রীর ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে সে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফিজনুর রহমান টেলিফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, বাবুল কান্তির যৌন নিপীড়নের ব্যাপারে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ আসার পর আমি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। এমন চরিত্রের অধিকারী কোনো লম্পট আদর্শ শিক্ষক হতে পারে না। আমি জেনেছি এরই মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে তবে এখনও আমি রিপোর্ট হাতে পাইনি। রিপোর্ট পেলে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মেরাজ উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি খুবই অমানবিক। এমন ঘটনা সমাজের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এরই মধ্যে প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে তাকে ওই স্কুল থেকে ট্রান্সফার করে দেয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার এবিএম নুরুজ্জামান বলেন, তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।

ছাত্রীরা আমার কাছে স্বীকার করেছে যে তাদের নানাভাবে নিপীড়ন করা হয়েছে। অতি শিগগির আমি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেব।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুস জানান, অনেক ছাত্রী আমাদের শিক্ষকদের বাবুলের নানা অনৈতিক কথা জানিয়ছেন। যোগাযোগ করা হলে বাবুল কান্তি বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক। পরে তিনি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন।বিডিটুমোরো
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
আরো সংবাদ পড়ুন