সহপাঠী সৌমেন রাহা অপুর প্রেমের বলি হয়েছে খুলনা সরকারি বিএল কলেজের অনার্সের ছাত্রী তনিমা বিশ্বাস পলি।
প্রতারক প্রেমিক রাহা নিজের অপকর্ম আড়াল করতে পলিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে হত্যা করে। মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে লাশ ফেলে দেয় ভৈরব নদীতে। কিন্তু ঘটনাচক্রে সব ফাঁস হয়ে গেছে। পুলিশ পলি’র লাশ উদ্ধার করেছে। এদিকে ঘটনার পর থেকে সৌমেন
লাপাত্তা। হত্যাকারীকে আটক ও বিচারের দাবিতে যশোরের নওয়াপাড়া ও খুলনার ফুলতলা এবং দৌলতপুরে বিক্ষোভ করেছে পলি’র সহপাঠীরা। তারা কলেজের বোটানি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ অধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। প্রতারক সৌমেন রাহাকে বিএল কলেজ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানায় তারা। উল্লেখ্য, সৌমেন খুলনার দৌতলপুর বিএল কলেজের গণিত বিভাগের ছাত্র। এর আগেও সৌমেনের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রী সহপাঠীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের সর্বনাশ করার অভিযোগ রয়েছে।
যশোরের অভয়নগর নওয়াপাড়ার ইনস্টিটিউট পাড়ার বাসিন্দা তনিমা বিশ্বাস পলি দৌলতপুর বিএল কলেজের বোটানি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। একই কলেজের সহপাঠী হিসেবে এক বছর আগে ফুলতলার ছেলে ও বিএল কলেজের গণিত তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সৌমেন রাহা অপুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে পরিণয়। যা এক পর্যায়ে শারীরিক সম্পর্কে রূপ নেয়। অপু বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পলির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। অপু গ্রামের বাড়ি ছেড়ে ফুলতলা বাজারে একটি বাসা ভাড়া নেয়। স্ত্রীর পরিচয়ে পলি প্রায়ই সেই বাসায় যাতায়াত করতো। এভাবে চলতে চলতে পলি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে অপু তাকে নানা ভাবে বুঝিয়ে গত মাসে গর্ভপাত করায়। এতে পলি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর দু’জনের যোগাযোগ কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এদিকে অপু তার পূর্বের প্রেমিকা শিলার সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলে। পলির মতো শিলাকেও স্ত্রী সাজিয়ে ওই বাসায় রাখতে শুরু করে। এদিকে ঘটনা শুনে পলির মামা অপুকে চাপ দিতে থাকে বিয়ের জন্য। এক পর্যায়ে গত শনিবার সন্ধ্যায় অপুর মা, মামা ও কয়েকজন স্থানীয় লোককে সঙ্গে নিয়ে পলির মামা প্রশান্তর বাড়িতে আসেন এবং সাফ জানিয়ে দেন তাদের পক্ষে পলিকে ঘরে তুলে নেয়া সম্ভব নয়। তারা পলির চরিত্র নিয়ে নানা প্রকারের বিরূপ মন্তব্য করেন। এক পর্যায়ে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তাদের মেয়ের পরিণতি ভাল হবে না মর্মে শাসিয়ে যান। এদিকে বেগতিক দেখে অপু ফোন করে পলিকে তার ফুলতলার বাসায় দেখা করতে বলে। প্রেমিকের ফোন পেয়ে গত রোববার সকালে পলি ফুলতলায় চলে যায়। পলিকে নিয়ে অপু সারাদিন ওই বাসায় ফুর্তি করে। সূত্র বলছে, এক পর্যায়ে পলিকে চেতনানাশক খাইয়ে অপু তার দুই বন্ধুকে পলির বেডে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে তিন বন্ধু মিলে রাতভর পলির ওপর নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে সোমবার ভোরে পলিকে তারা শ্বাসরোধ করে হত্যার পর বস্তায় লাশ ভরে পাশের ভৈরব নদে নিয়ে ফেলে দেয়।
পরদিন পলি বাড়ি না ফেরায় পলির দিদিমা অপুদের বাসায় গিয়ে পলির সন্ধান করে। তারা পলির ব্যাপারে মুখ না খোলায় তার দিদিমা নওয়াপাড়ায় ফিরে আসেন। তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর গত রাতে স্থানীয় লোকদের মুখে খবর পেয়ে ফুলতলা থানা পুলিশ ভৈরব নদ থেকে পলির লাশ উদ্ধার করে।
পলি’র পরিবারের অভিযোগ, অপু ও তার প্রেমিকা শিলা এবং অপর দুই সহযোগী মিলে পলিকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যার পর তার লাশ ভৈরব নদে ফেলে দিয়েছে। পুলিশ নদী থেকে লাশ উঠিয়ে ময়না তদন্তপূর্বক গতকাল তা নিহতের পরিবারের হাতে হস্তান্তর করে। গতকাল সন্ধ্যায় নওয়াপাড়া মহাশ্মশানে লাশের সৎকার সম্পন্ন হয়। এদিকে অপু, তার প্রেমিকা শিলা ও অপুর মা বাসা ফেলে পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ফুলতলা থানায় মামলা করেছেন নিহতের পিতা শিবু বিশ্বাস। মামলা নং ১২। মামলায় প্রেমিক অপু, তার মা ও প্রেমিকা শিলাসহ আরও অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, প্রবাসী অঞ্জন রাহার পুত্র অপুর ডাক নাম সিকো। সে এর আগে একাধিক গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে তাদের সর্বনাশ করে শেষ পর্যন্ত তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তাদের বিপদের মুখে ঠেলে দেয়।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
আরো সংবাদ পড়ুন