গৃকর্মী আদুরীর ওপর চালানো হয়েছে মধ্যযুগীয় নির্যাতন। ক্রীতদাসীর জীবন ছিল তার। কারণে-অকারণে প্রতিদিন তার হাতে ইস্ত্রির ছ্যাঁকা, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান ব্লেড দিয়ে চিঁড়ে দেওয়া হতো। আর এর সঙ্গে ছিল লাঠি দিয়ে পিটুনি।
বাড়ির সবাই ভুড়িভোজ করলেও রাতে শুকনো মুড়ি জুটতো আদুরীর ভাগ্যে। ঘুমানোর অনেক জায়গা থাকলেও তার ঠাঁই হতো বেলকনিতে। স্বাধীনতা বলে কিছুই ছিল না তার। বর্তমান সভ্যতার এ যুগে এভাবেই কাটতো আদুরীর দিন-রাত। পার হয়েছে মাস-বছর।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া শিশু গৃহকর্মী আদুরীর জবানবন্দিতে নির্যাতনের এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুরু মিয়া বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতিত আদুরীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
আদালত সূত্র জানায়, আদুরীর জবানবন্দিতে বলেছে, গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদী তাকে ঠিকমতো খেতে দিতেন না। কারণে-অকারণে প্রতিদিনই তাকে ইস্ত্রি দিয়ে সারা গায়ে ছ্যাঁকা দিতেন। ব্লেড দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে চিঁড়ে দিতেন। মাঝে-মাঝে লাঠি দিয়ে পেটাতেন। রাতে শুধু মুড়ি খেতে দেওয়া হতো আর ঘুমাতে দেওয়া হতো বেলকনিতে।
এর আগে গত ১ অক্টোবর গৃহকর্মী শিশু আদুরীকে (১১) নির্যাতনের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদী।
সেদিন নদী জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমি খুবই বদরাগী। স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে প্রায় দুই বছর ধরে আমি আলাদা থাকি। রাগের মাথায় কখনো গরম খুন্তি দিয়ে, কখনো গরম ইস্ত্রি দিয়ে আদুরীকে ছ্যাঁকা দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো সময় উত্তেজিত হয়ে আমি নিজেই নিজের শরীর ব্লেড দিয়ে কাটতাম। আদুরীর শরীরও ব্লেড দিয়ে কাটতাম।’
সেদিন জবানবন্দিতে নদী আদুরীকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করলেও তাকে ডাস্টবিনে ফেলে আসার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
প্রসঙ্গত, ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বারিধারা ও ডিওএইচএস তেলের ডিপোর মাঝামাঝি রেললাইন সংলগ্ন একটি ডাস্টবিনের পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় গৃহকর্মী আদুরীকে উদ্ধার করা হয়।
এরপর তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।
এ ঘটনায় পল্লবী থানায় নদী, তার স্বামী সাইফুল ইসলাম মাসুদ, মাসুদের দুলাভাই চুন্নু মীর ও তাদের আত্মীয় রনিসহ চারজনকে আসামি করে মামলা হয়।
এদিকে, এ ঘটনায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নওরীন জাহান নদীকে (২৫) তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে পল্লবী থানা পুলিশের একটি দল।
শুক্রবার ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হলে তার বিরুদ্ধে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
আরো সংবাদ পড়ুন